ড্রেকো ১৮
বিশ্বাস করেন আর না করেন -- আমাদের এই চোরা সরকার আর থাকবে না -- বলেন এইটা চান কিনা। যদি চান তো কন, আর না চাইলে বুইঝেন। আর খালি আওয়ামীলীগ না, কোন চোরামিই আর থাকবে না। এইটা কি আপনারা চান? বুইজ্ঝা কইয়েন।
এয়ারপোর্টে গেছলাম আজকে। কাউকে ছেড়ে যাওয়ার সময় আমরা খুব কাঁদি, কিন্তু কাছে থাকতে এপ্রিশিয়েট করিনা অতটা। আমরা কি সেন্সিটিভ জাতি? একজন আরেকজনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলা লক্ষ করি? কেউ যদি হঠাত পরিচয়ে বেশী কাছে ঘেঁষতে চায় -- তখন থাকে থামালে সেকি আহত হয়ে দূরে সরে যায়? আমরা কি হেলথি বাউন্ডারি বুঝি? কেউ ভাল ব্যবহার করলে তাকে বেকুব মনে করে ঘাড়ে চেপে যাই? আমরা গিরাইম্মা না শহুরে? সাহসী না ভীতু? দেশপ্রেমী না ভণ্ড? বুদ্ধিমান নাকি বেকুব? গান টান ছেড়ে দিয়ে এসির মধ্যে ভিআইপি রোডে গাড়িতে ঘুরতে ভালই লাগে যদি ট্রাফিকটা একটু মডারেট থাকে। কিন্তু যাই বলেন, এই ধ্বজভঙ্গ ঢাকা শহরটা আমি অ্যাকসেপ্ট করতে পারিনা। বাসগুলা কেমন ভাঙ্গা; বিল্ডিংগুলা ধ্যারধ্যারা; রাস্তায় কোন গাছপালা নাই, চরম নোংরা; ধুলায় ধূসরিত চারপাশ; রিকশা ড্রাইভারগুলা কুথে কুথে চালাচ্ছে পিঠ ব্যাকা করে;অথচ ছুটছে সবাই যেন সবকিছু ঠিকঠাক। আসলে তো এই ভগ্নস্তূপে কোনকিছুই ঠিকঠাক নাই। প্রত্যেকটা মানুষ একেকটা ধান্দায় ছুটে বেড়াচ্ছে। কেউ ঠকছে, কেউ ঠকাচ্ছে।
এয়ারপোর্টে একটা বোবা পোর্টার ট্রলিটা শুধু ঢোকার দরজাটা পার করে দিয়ে ১০০ টাকা নিল, কিন্তু সুটকেস গুলা নামায়ে কনভেয়ার বেল্টে পর্যন্ত উঠায়ে না দিয়ে চলে গেল। ভারি ব্যাগগুলা আমরাই টানাটানি করলাম। তিনজনের ঢুকতে টিকেট লাগলো ৯০০, তাও শুধু ওই দরজাটা পার হওয়ার জন্য। কফির দাম মাত্র ৩০, পরে বারবি-ডল সাইজের কাপ দেখে বুঝলাম, ওহ ঠিকই আছে, সবকিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ। গাড়ি পার্ক করতে ১০০ কিন্তু পার্কিং লটটা চাঁদের পিঠ; প্রতিদিন যে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাই হচ্ছে, তার একটা টাকাও মেইন্টেন্যান্সে ব্যয় হয় না। দেশে যে ম্যানেজারগুলা কাজ করে, এদের বোধহয় শুধু স্যালারিটা কালেক্ট করতেই অনেক পরিশ্রম হয়ে যায়, কাজ করার আর সময় থাকেনা। বাথ্রুমে গিয়ে দেখি মোটামুটি পরিস্কার কিন্তু উৎকট গন্ধ। পৃথিবীর আর সব দেশ যা পারে, শুধু আমরাই সেটা পারিনা কেন? কেউ কখনও ব্যাপারটা ভেবে দেখসেন? কেন আমরা এত্ত স্পেশাল?
উপরের প্যারাদুটা কালকে লেখা। মনটা একটু বেসামাল ছিল বিভিন্ন কারণে। আমার চ্যানেলে ইন্টারফিয়ারেন্স থাকায় আর লিখিনি। আজকে ব্যাক টু রিয়ালিটি; মিস্ত্রি চরাচ্ছি সকাল থেকে। বিল দিতে যেয়ে ব্যাঙ্কের লাইন দেখে আর দাঁড়াইনি। প্রত্যেকদিন এইরকম রাস্তা পর্যন্ত লাইন হয় কিন্তু ওই টাকার বস্তা বেতন পাওয়া ম্যানেজারদের এইটুকু কমন সেন্স নাই যে কাস্টোমার সারভিস বলে একটা ব্যাপার পৃথিবীতে আছে। একজন টেলার দিয়ে একটা ব্যাংক চালানো ইজ রিয়ালি এ ক্রাইম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষজন দাঁড়ায়ে থাকে, আর ঐদিকে চেয়ারের উপরে একটা তোয়ালে ফেলে বিগ বসেরা সারাদিন কোথায় কাটায় কে জানে? এই ধরেন অভ্রর কথাই ধরি -- যে সফটওয়্যার দিয়ে বাংলা টাইপ করি। এটাকে আরও ১০০ গুন উন্নত করা সম্ভব। c তে চ হয় না, ch তে চ হয়, এটা কি ওদের প্রোগ্রামাররা জানে না? নতুন ভার্শনে এগুলা ঠিক হয়না কেন?
তো শুরুতে যে মাল নিয়ে বললাম, আপনারা কি চান দেশের দুর্নীতি না থাকুক? অনেকেই তো এটা চান না। আমাদের প্রিয় ড্রেকোরা এটা চায় না, কারণ দুর্নীতি না থাকলে ওদের আপারহ্যান্ডটা তো আর থাকবে না কারণ আমাদের বেইস বা লোয়ার ইন্সটিঙ্কটগুলা কাজে লাগায়েই তো ওরা আমাদেরকে ধরা খাওয়ায়। আমাদের ইসলামিক সংগঠনের পোলাগুলা কি সারাদিন পর্ণ দেখে? আমার বউ আবার একটু বাচ্চাদের মত, ইয়াব্বড় বড় ব্রেস্ট নিয়ে ওড়না ছাড়াই ঢাকার রাস্তাঘাট চরে বেড়ায় রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত। লোকজন চমকে চমকে তাকায় ওর পোশাক আশাক দেখে। আমি দেখেও দেখিনা, মনে মনে হাসি। ওকে মাঝে মাঝে বলি সঙ্গে একটা শাল ফাল রাখতে, জাস্ট ইন কেস। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আসলে অনেক কিছুই করা যায়। আমাদের পাছে লোকে কিছু বলে -- ওই পুরানা রোগটা সারা বড্ড দরকার। এনিওয়ে, পাবলিক আর প্রাইভেট ভার্সিটির পোলাপানরা কি পর্ণ কম দেখে? এচ্ছি, হেন্তাই, এগুলা কি আপনারা জানেন? ক্যান্ডি ক্রাশ, জিটিএ, এনএফএস, এগুলা অবশ্য পুরানা হয়ে গেছে, এখনকার নেটওয়ার্ক গেমগুলার নাম আমি জানিনা, শুধু জানি যে গেম অ্যাডিকশন ইজ এ মাল্টি-বিলিয়ন ডলার বিজনেস। অ্যাপল, আইপ্যাড, ট্যাব, প্লে-স্টেশন, এগুলা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শুধু গেম খেলার জন্য বেসিক্যালি। আমাদের অ্যাক্টিভিজম, আর গ্যালাক্টিক ডিস্ক্লোজার নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কই ইয়ং জেনারেশনের? বাবারা দেশের মানুষের রক্ত চুষে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাচ্ছে, আর পোলাপান ফুর্তিসে গেম খেলতেছে আর সেলফি তুলে বেড়াচ্ছে। বউরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে ফুলে দিতে গিয়ে শাড়ি গহনার কম্পিটিশন দিচ্ছে। স্কুলের বাচ্চাদের শোফারওয়ালা গাড়ির ভিড়ে পাড়ার রাস্তায় জ্যাম লেগে যাচ্ছে। দুর্নীতি না থাকলে কি হবে এদের? কীভাবে আপনারা ফুটানি মারবেন আর সন্ধ্যায় মাল খেয়ে পার্টি করবেন?
যখন ঢাকার রাস্তায় বের হই আর দেশের মানুষের আচার আচরণ দেখি -- তখন শুধু ব্রেইন্ডেড জমবি ছাড়া কিছু দেখিনা। পরিবর্তন আনার কোন সম্ভাবনা দেখি না। সবাই একটা ঘোরের মধ্যে দিকবিদিক দিশাহারা হয়ে ছুটছে যার যার মত। সবকিছু খুব অর্থহীন আর হোপলেস মনে হয়। ঠিক এইসময় আম্মা কোত্থেকে এসে অ্যামেরিকান অ্যালাম্নি এ্যাসোসিয়েশনের লাইফ মেম্বার বুকলেটে পুরানো একটা ছবি দেখে বলা শুরু করল আমার একটা স্যুট বানানো দরকার। এটা সে অনেকদিন ধরেই বলে যাচ্ছে। কেন বলেন তো? শোনেন, দুই ডজনের বেশী স্যুট, দুইটা গাড়ি, আর একগাদা জিনিষপত্র আমার বোনের বেইসমেন্টে ফেলে আসছি, যে জন্যে দুলাভাই আমার উপর খাপ্পা। এটা বলে আমি প্রায়ই ফুটানি করি, তবে এগুলা খুব হাস্যকর জিনিষ।
আজকে আমি যে কথাটা বলে শেষ করতে চাই, সেটা হল, আপনারা বিশ্বাস করেন আর না করেন, পৃথিবীতে একটা চরম পরিবর্তন আসবে খুব শিগগিরই, আর খুব দ্রুত গতিতে। আমাদের ড্রেকো বন্ধুদের পৃথিবী থেকে প্রত্যাগমনের সময় হয়ে গেছে। এর কারণ হল আমাদের অ্যালাইজ -- প্লিয়েডিয়ান, অ্যান্ড্রোমিডান, আর্কটুরিয়ান, সিরিয়ান, প্রসিয়ান, ইত্যাদি ইটিগ্রুপ আমাদেরকে সাহায্য করতেছে। ইরানের মেহেরান কেশি নামের একজন বিজ্ঞানী গতকাল বা পরশু পৃথিবীর সব দেশের নেতানেত্রীদের উদ্দেশে একটা সেমিনার করে বলেছেন যে উনি তাঁর প্লাজমা টেকনোলজি, যেটা দিয়ে ফ্রী এনার্জি উৎপাদন করা যায়, সেটা সবাইকে গিফট করবেন যাতে পৃথিবীতে আর দারিদ্র্য বলে কিছু না থাকে। এই চেষ্টা উনি আগেও করেছেন কিন্তু পৃথিবীর মানুষ সবাই মাইন্ড কন্ট্রোলড জম্বি স্লেভ বলে কেউ উনার কথা পাত্তা দেয়নি। কোন মেইন্সট্রীম মিডিয়া খবরগুলা কাভার করেনি। আমরা যারা কনশাস এবং জাগ্রত, তারা আশা করছি যে এইবার অন্তত আপনারা ব্যাপারটার মর্ম বুঝতে পেরে ওটাকে ফলো আপ করবেন। আমরা আমাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাব কিনা তা নির্ভর করতেছে আপনাদের উপর -- মিরাজ আদিব অভিজিৎ, এরা কি ওদের ইগোটা একটু কন্ট্রোল করে, আমাদের কথা শুনে একটু গা ঝাড়া দিয়ে অর্থপূর্ণ কিছু করার চেষ্টা করবে? নাকি ওই থোড় বড়ি খাঁড়া ঘোড়ার ডিম সাব্জেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থেকে ওদের ওই এজেন্ট স্মিথ গেইটকীপারের চাকরিতেই বহাল থাকবে জীবন যতদিন আছে? ডিসিশন আপনাদের।
No comments:
Post a Comment